Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

লবণসহিষ্ণু চীনাবাদামের চাষাবাদ পদ্ধতি

বাংলাদেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকার বেশির ভাগ জমির মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানিতে বিভিন্ন মাত্রার (২.০ থেকে >১৬.০ ডিএস/মি) লবণাক্ততা বিদ্যমান থাকায় রবি মৌসুমে অর্থনৈতিকভাবে সব ফসল চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। তাই বেশির ভাগ জমি উক্ত মৌসুমে পতিত থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব ফসল বৃষ্টিনির্ভর অবস্থায় চাষ করা যায় অর্থাৎ কোন বাড়তি সেচের প্রয়োজন হয় না সেসব ফসল লাভজনকভাবে উক্ত এলাকায় চাষ করা সম্ভব। এ রকমই একটি ফসল হলো চীনাবাদাম। চীনাবাদাম শিমগোত্রীয় ফসল বিধায় এতে নাইট্রোজেন সারসহ অন্যান্য রাসায়নিক সার কম লাগে। অধিকন্তু এর শিকড়ের গুটি, পাতা ইত্যাদি মাটিতে মিশে মাটির জৈব পদার্থের চাহিদা মিটায়। চীনাবাদামের দানায় প্রচুর পরিমাণে তেল (৪৮-৫২%), প্রোটিন (২৫-৩০%), শর্করা (২০-২৫%) ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই থাকে। উপরের আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, চীনাবাদাম  চাষ বাংলাদেশের লবণাক্ত এলাকার মাটি ও মানুষের স্বাস্থ্য উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। চীনাবাদামের  গাছ একটি উত্তম গো-খাদ্য।


এক হিসাবে দেখা গেছে যে, চীনাবাদামের যে সমস্ত জাত অঙ্গজ বৃদ্ধি পর্যায় থেকে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত ৮ ডিএস/মি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। সে সমস্ত জাতের সাহায্যে লবণাক্ত এলাকার প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমি রবি মৌসুমে চাষের আওতায় আনা সম্ভব। উক্ত সম্ভাবনাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে এ পর্যন্ত পাঁচটি লবণসহিষ্ণু  চীনাবাদাম জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জাতগুলো হলো বিনাচীনাবাদাম-৫, বিনাচীনাবাদাম-৬, বিনাচীনাবাদাম-৭, বিনাচীনাবাদাম-৮ বিনাচীনাবাদাম-৯। নিম্নে জাতগুলোর উদ্ভাবনের ইতিহাস ও প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।


উদ্ভাবনের ইতিহাস
স্থানীয়ভাবে চাষকৃত জাত, ঢাকা-১ এর থেকে উদ্ভাবিত মিউট্যান্ট
Mut-3 কে পুনরায় ২৫০ গ্রে.মাত্রার গামা রশ্মি প্রয়োগ করে M6/25/54-20M6/25/54-82 নামের দুটি মিউট্যান্ট পাওয়া যায় যা মাতৃজাতের তুলনায় ১০-১৫% বেশি ফলন দেয় এবং ফুল আসা হতে পরিপক্ব পর্যায় পর্যন্ত ৮ডিএস/মি মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারে। এ মিউট্যান্ট দুটিকে ২০১১ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড যথাক্রমে বিনাচীনাবাদাম-৫, বিনাচীনাবাদাম-৬ নামে অনুমোদন দেয়। এর পরে ঢাকা-১ জাতে ১৫০ গ্রে মাত্রার গামা রশ্মি প্রয়োগ করে D1/15/17-1 নামক অধিক ফলনশীল লবণসহিষ্ণু মিউট্যান্ট উদ্ভাবন করা হয়। স্প্যানিশ টাইপ জাত ঢাকা-১ এর সাথে ভ্যালেন্সিয়া টাইপ  জাত ঝিঙা বাদামের সংকরায়ণের মাধ্যমে GC-1-24-1-1-2 কৌলিক সারিটি পাওয়া যায়। এছাড়া পাবনার পাকশী এলাকায় চাষাবাদকৃত PK-1 জাতের বীজে ২৫০ গ্রে  মাত্রার গামা রশ্মি প্রয়োগ করে PK/25/3-1 নামের আর একটি মিউট্যান্ট পাওয়া যায়। এগুলোকে ২০১৫ সালে যথাক্রমে  বিনাচীনাবাদাম-৭,  বিনাচীনাবাদাম-৮ ও  বিনাচীনাবাদাম-৯ নামে জাতীয় বীজ বোর্ড লবণাক্ত এলাকাসহ সারাদেশে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দেয়।


চাষাবাদ পদ্ধতি
মাটি

বেলে, বেলে-দোআঁশ, এঁটেল-দোআঁশ মাটি বাদাম চাষের জন্য উপযোগী। এঁটেল মাটিতেও চীনাবাদাম চাষ করা যায়। তবে এঁটেল মাটিতে চাষের ক্ষেত্রে চীনাবাদাম তোলার সময় মাটি শক্ত থাকলে পানি দিয়ে নরম করে নিতে হবে এবং গাছসহ চীনাবাদাম হতে লেগে থাকা কাদা পুকুর/ট্যাপের পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে আলগা পানি শুকানোর জন্য আটিগুলোর বাদাম উপরের দিকে ও গাছ নিচের দিকে  করে রেখে দিতে হবে।


বপনের সময়
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি হতে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অর্থাৎ পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে ফাল্গুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, রোপণের সময় মাটির লবণাক্ততা যেন অবশ্যই ৫.০ ডিএস/মি এর নিচে থাকে নতুবা চারা গজানো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।


বীজের পরিমাণ
বপন পদ্ধতি


বীজ সারিতে বপন করতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ সেমি. (১০ ইঞ্চি) এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১৫ সেমি. (৬ ইঞ্চি)। বীজগুলো মাটির ২.৫-৪.০ সেমি. (১-১.৫ ইঞ্চি) নিচে পুঁতে দিতে হবে।


জমি তৈরি
জমির আগাছা ভালোভাবে পরিষ্কার করে ৩-৪টি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।


সার প্রয়োগ
বপনের সময় প্রতি কেজি বীজের জন্য ৪০ গ্রাম জীবাণু সার দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। জীবাণুসার দিলে ইউরিয়া সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
ক্ষতিকর পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থাপনা


পিপীলিকা
জমিতে বাদামের বীজ লাগানোর পর পিপীলিকা আক্রমণ করে বীজ খেয়ে ফেলতে পারে। তাই বপনের পর ক্ষেতের চারদিকে সেভিন ডাস্ট ৮৫ এসপি ছিটিয়ে দিলে বীজ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।


পাতা মোড়ানো পোকা, বিছা পোকা ও জাবপোকা
এই পোকাগুলো দমনের জন্য সিমবুশ ১০ ইসি বা ক্লাসিক ২০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি. বা রিপকর্ড ১০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি. মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।


উঁইপোকা
উঁইপোকা চীনাবাদাম গাছের শিকড় কাটে ও ক্ষত সৃষ্টি করে। ফলে গাছ মারা যায়। তাছাড়া মাটির নিচে বাদামের খোসা ছিদ্র করে বীজ খায়। উঁইপোকা দমনের জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।


১. পানির সাথে কেরোসিন মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।
২. পাট কাঠির ফাঁদ তৈরি করে এ পোকা কিছুটা দমন করা যায়। মাটির পাত্রে পাটকাঠি ভর্তি করে পুঁতে রাখলে তাতে উঁই পোকা লাগে। পাটকাঠি ভর্তি পাত্র তুলে এই পোকা মারা যায়।
৩. আক্রান্ত মাঠে ক্লাসিক-২০ ইসি ১০ লিটার পানিতে ৩০ মিলি. মিশিয়ে (প্রতি ৫ শতাংশের জন্য) জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।


রোগ ও দমন ব্যবস্থাপনা
পাতার রোগ

সার্কোস্পরা এরাচিডিকোলা ও ফেসারিওপসিস পারসোনাটা নামক দুটি ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। এ রোগের আক্রমণের ফলে পাতার ওপর হলদে রেখা বেষ্টিত বাদামি রঙের দাগ সৃষ্টি হয়। দাগ আকারে বড় হতে পাতার ওপর ছড়িয়ে পরে। গাছ দেরিতে আক্রান্ত হলে পাতার নিচে গাঢ় বাদামি হতে কালচে বর্ণের দাগ দেখা দেয়। পাতার বাকি অংশের সবুজ রঙ মলিন হয়ে ধীরে ধীরে পাতা ঝরে পড়ে।


প্রতিকার
১.  এ রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে গাছে ব্যাভিস্টিন ৫০ ডব্লিউ পি ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১ দিন অন্তর অন্তর ২-৩ বার ছিটিয়ে দিলে রোগের প্রকোপ কমে যায়। অথবা ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানির সাথে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়।
২.  ফসল সংগ্রহের পর আগাছা পুড়ে ফেলতে হবে।

সারের নাম হেক্টরপ্রতি (কেজি) একরপ্রতি (কেজি)
ইউরিয়া ৪০-৫০ ১৬-২০
টিএসপি ১৬৫-১৭৫ ৬৭-৭১
এমওপি ১৩০-১৪০ ৫৩-৫৭
জিপসাম ১১০-১২০ ৪৫-৪৯


মরিচা রোগ
পাকসিনিয়া এরাচিডিস নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় পাতার নিচের দিকে মরিচা পড়ার মতো উঁচু বিন্দুর মতো দাগ দেখা যায়। দাগ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে ফলন অনেক কমে যায়।


প্রতিকার
১.  এ রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে গাছে ব্যাভিস্টিন ৫০ ডব্লিউপি ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানি মিশিয়ে প্রতি ১০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
২.  পরবর্তী গাছ থেকে গজানো গাছ, আগাছা এবং খড় পুড়ে ফেলে এ রোগের আক্রমণ কমানো যায়।


গোড়া পচা রোগ
এ রোগের আক্রমণের ফলে কাণ্ড পচে যায় এবং ধীরে ধীরে গাছ মরে যায়।


প্রতিকার
১.  রোগাক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হয়।
২.  প্লাবন সেচ দিয়েও আক্রমণ রোধ করা যায়।
৩.  শস্যপর্যায় অনুসরণ করে এ রোগের আক্রমণ কমানো যায়।
৪.  বপনের পূর্বে ৪ মিলিগ্রাম এগ্রোসান দিয়ে প্রতি কেজি বীজ শোধন করতে হবে।


ফসল সংগ্রহ ও বীজ সংরক্ষণ
ভালো ও গুণগতমানের বীজ পেতে হলে ফসল যথাসময়ে সংগ্রহ করতে হবে। সঠিক সময়ে ফসল তোলার জন্য ফসলের পরিপক্বতা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকা আবশ্যক। যখন গাছের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ বাদাম পরিপক্ব হবে তখনই চীনাবাদাম তোলার উপযুক্ত সময়। পরিপক্ব হলে বাদামের খোসার শিরা-উপশিরাগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং গাছের পাতাগুলো হলুদ রঙ ধারণ করে নিচের পাতা ঝরে পড়তে থাকে। বাদামের খোসা ভাঙার পর খোসার ভেতরে সাদা কালচে রঙ ধারণ করলেই বুঝতে হবে ফসল উঠানোর উপযুক্ত সময় হয়েছে। ক্ষেত থেকে তোলার পর বাদামের গায়ে লেগে থাকা কাদামাটি বা বালু পরিষ্কার করে আটিগুলো উপুর করে রোদে শুকাতে হবে। এতে করে বাদামের গায়ে লেগে থাকা পানি ঝরে যাবে। পরে গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে উজ্জ্বল রোদে দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা করে ৫-৬ দিন শুকাতে হবে। এ অবস্থায় বীজের আর্দ্রতা ৮-১০% হয়ে থাকে। শুকানোর পর খোসাসহ বাদাম ঠাণ্ডা করে পলিথিন আচ্ছাদিত চটের বস্তায় মাচার উপর সংরক্ষণ করতে হবে।

 

ড. মো: আবুল কালাম আজাদ* মো: কামরুজ্জামান**

*সিএসও ও **এসও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাকৃবি চত্বর, ময়মনসিংহ-২২০২ মোবাইল : ০১৭১০৭৬৩০০৩


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon